লিখেছেন নাঈমুল করিম
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানা খাতের কর্মীরা চাকরি হারিয়ে ফেলতে পারেন কারণ করোনা ভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো ফরমাশ বাতিল করে দিচ্ছে।
ঢাকা, মার্চ ১৯ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) — বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার বহু শ্রমিক চাকরি হারাতে পারেন কারণ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বৈশ্বিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো ফরমাশ দেরি করছে বা বাতিল করা শুরু করেছে। কারখানা মালিকদের মতে এই সব ফরমাশের আর্থিক মূল্য অন্তত ১৩৮ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের শতাধিক কারখানা ফরমাশ বাতিলজনিত কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে দাবি কারখানামালিকদের। বিশ্বজুড়ে খুচরা বিক্রির বাজারে ধস নামায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে জারা ব্র্যান্ডের মালিক ইনডিটেক্স, এবং এইচএন্ডএম ফ্লু-জাতীয় ভাইরাসের বর্তমান মূলকেন্দ্র ইউরোপের বাজারে তাদের দোকান আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে।
চার হাজারের বেশি সদস্যের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট রুবানা হক করোনা ভাইরাসকে ‘দেশের জন্য অভিশাপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “আমরা সম্পূর্ণভাবে রপ্তানি আয়ের উপর নির্ভরশীল।”
তিনি আরো বলেন, “ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি আমাদের আবেদন ছিলো তারা যাতে জুন পর্যন্ত ফরমাশগুলো নিয়মিত রাখে এবং আমাদের এতটুকু সমর্থন করে যায় যাতে আমাদের কর্মীরা চাকরি হারিয়ে না ফেলে। ফরমাশ বাতিল হলে তারা কিভাবে জীবন ধারণ করবে বা টিকে থাকবে?”
চীনের পর পৃথিবীর বৃহত্তম পোশাক রপ্তানীকারক দেশ- বাংলাদেশ বিশ্বের বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর উপর প্রচণ্ডভাবে নির্ভরশীল। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে চার মিলিয়নের বেশি লোক কাজ করেন এবং দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে এই খাত থেকে।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রগুলো এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার উপায় খুঁজতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢেলে দিচ্ছে। এরপরও করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলছে এবং বহু জনপদ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
এইচএন্ডএম বলেছে যে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এই বিষয়ে সরবারহকারিদের সাথে তারা স্বচ্ছতরভাবে আলাপ-আলোচনা করছে।
থমসন রয়টার্সকে পাঠানো ইমেইলে তাদের একজন মুখপাত্র বলেন, “সরবারহকারিদের প্রতি আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি অব্যাহত থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, “আপাত দুর্যোগের পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে হবে, অংশীদারদের সাথে এক সাথে কাজ করতে হবে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা কঠিন কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ … (এবং) এমন সমাধানে আসতে হবে যা সব পক্ষের জন্য উপযুক্ত হয়।”
শ্রমিক অধিকারকর্মীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কারণে কোনো কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়নি তবে অনেকে চাকরি হারানোর আশঙ্কায় পড়ে গেছেন।
শ্রমিক সংহতি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা কল্পনা আক্তার বলেন, “পোশাক খাতের কর্মীরা দিন এনে দিন খায়। কারখানার অর্ডার বাতিল হয়ে যাচ্ছে শুনে তারা ভীত হয়ে পড়েছে।”
একই সাথে তিনি বলেছেন, কর্মীদের জন্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও ঢুকে পড়েছে। বাংলাদেশে এর মধ্যেই ২০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন এক ইমেইল বার্তায় বলেছে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে প্রতিরক্ষামূলক উপকরণ, নমনীয় কাজের পরিবেশ, এবং স্বাস্থ্যসম্মত কাজের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে রুবানা হক বলেন পোশাক কারখানাগুলো এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে এবং ভালো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে।
চলতি মাসে বাংলাদেশ সরকার বলেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সমর্থন ঘোষণা করার আগে শিগগিরই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বিশ্লেষণ করা হবে।
(প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন নাঈমুল করিম @Naimonthefield; সম্পাদনা করেছেন কেটি মিগিরো। অনুগ্রহ করে থম্পসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে ক্রেডিট দিন, যা থম্পসন রয়টার্সের দাতব্য শাখা এবং যা মানবিক, নারী ও এলজিবিটি+ অধিকার, মানবপাচার, সম্পত্তির অধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে। ভিজিট করুন: http://news.trust.org)
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.