লিখেছেন নাঈমুল করিম
ঢাকা, এপ্রিল ২১ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) - হাজার হাজার শ্রমিককে মার্চ মাসের বেতন না দিয়ে সব গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ করে দেওয়া মালিকদের বিপক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ, জানিয়েছেন একজন কর্মকর্তা।
হাজার হাজার শ্রমিক চলমান লকডাউন উপেক্ষা করে বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন এবং এর আগে পশ্চিমা বহু ফ্যাশন ব্রান্ড তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল করে দিয়েছে।
সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়িছে অন্তত ৩৫০টি কারখানা তাদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেনি। এর ফলে অন্তত ১৫০,০০০ হাজার শ্রমিক বিপদে পড়ে গেছেন। অন্য দিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন প্রকৃতপক্ষে আরো অনেক বেশি শ্রমিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শিবনাথ রায় বলেছেন, যে সব প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন দেয়নি তারা গার্মেন্ট খাত বাঁচাতে সরকারের ঘোষণা করা ৫৮৮ মিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ থেকে কোনো আর্থিক বরাদ্দ পাবে না।
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে তিনি বলেন, “কারখানা মালিকদের উপর চাপ বাড়াতে আমরা এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছি। এরপরও যদি তারা বেতন পরিশোধ না করে, তাহলে আমরা শ্রম আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি রুবানা হক বলেছেন তাদের সমিতিভুক্ত ২,২৭৪ কারখানার মধ্যে ৯৮টি এখনো বেতন পরিশোধ করেনি।
তার মতে, “কোভিড-১৯ এর কারণে পৃথিবীতে যে আকস্মিক পরিবর্তন হয়েছে” সেই দুর্ভাগ্য বরণ করে অনেক ছোট ছোট গার্মেন্ট কারখানাগুলো হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে, যারা সাব কন্টাক্টে কাজ করে।
বাংলাদেশের কয়েক কোটি মানুষ গার্মেন্ট খাতের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ফ্যাশন ব্রান্ডের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতের তিন বিলিয়ন মূল্যের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেছে।
এই খাত থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ অর্জিত হয় এবং এই খাতে কাজ করেন চার মিলিয়নের বেশি লোক, যাদের বেশির ভাগই নারী।
শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা বলেছেন কারখানা মালিকদের উচিত ছিলো কারখানা খোলা থাকাকালেই বেতন পরিশোধ করা।
এক লাখ শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব করা সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের প্রধান নাজমা আক্তার বলেন, “আমি এখনো শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ফোন পাই, যারা বেতন পায়নি বলে খুব কষ্ট করে দিনযাপন করছে। তারা আসলে এ রকম পরিণতি প্রাপ্য নয়।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের শ্রমিকেরা পুরো মার্চ মাস কাজ করেছেন। সুতরাং তাদের বেতন না পাওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।”
বেতন না পেয়ে মানবিক বিপর্যয়ে পড়া শ্রমিকদের একজন হলেন আফরোজা। অন্তঃসত্ত্বা এই নারী সামনের দিনগুলো খাবার পাবেন কি না তা নিয়েই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
নিজের নামের প্রথম অংশই কেবল প্রকাশ করা আফরোজা বলেন, “আমরা খুব চাপে পড়ে গেছি। আমার বাড়িওয়ালা সব সময়ই মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে ঘর ভাড়া বাকি পড়ে গেছে। রোবাবর আমি খাওয়ার জন্য ৩০০ টাকা ধার করেছি। এখন এইটুকুই আমার পরিবারের সম্বল।”
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.