* Any views expressed in this opinion piece are those of the author and not of Thomson Reuters Foundation.
লিখেছেন নাঈমুল করিম
ঢাকা, জানুয়ারি ২৯ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) — বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরের অন্তত ১০,০০০ রোহিঙ্গা শিশু আগামী এপ্রিল মাস থেকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পেতে যাচ্ছে, যা তাদেরকে পাচার হওয়ার ও শোষণের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করবে বলে প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষের।
বৌদ্ধ-অধ্যুষিত মায়ানমারের সেনা হামলা ও অত্যাচারের শিকার হওয়া ৯০০,০০০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ মনে করেন আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শরণার্থীদের তরুণ প্রজন্মকে পাচার হওয়ার ঝুঁকি, ভালো কাজের প্ররোচনার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে এবং মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী সহায়তা ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহমুব আলম তালুকদার এ বিষয়ে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, “এই উদ্যোগ অবশ্যই কার্যকরী হবে।”
তিনি আরো বলেন, “তারা যখন পড়াশোনা শুরু করবে (মায়ানমায়ারের পাঠ্য), তাদের বাবা-মায়েরা স্কুলের বিষয়ে আরো যত্নবান হবেন। শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত খুবই ভালো উদ্যোগ। এই উদ্যোগ তাদের ভবিষ্যতই বদলে দেবে।”
জাতিসংঘের হিসেব অনুসারে, ২০১৭ সালে ৭০০,০০০ রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে চলে আসে, যাদের মধ্যে ৪০০,০০০ শিশু। মায়ানমারে মুসলিম সংখ্যালঘুদেরকে অবৈধ অভিবাসী মনে করা হয়।
ম্যানহ্যাটনের অর্ধেকেরও কম আয়তনের- ৬,০০০ একর আয়তনের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পাচারের ঘটনার পরিমাণ বেড়েই চলছে। ২০১৯ সালে অন্তত ৩৫০টি এ রকম ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। জাতিসংঘের অভিবাসী সংস্থার মতে, এর ১৫% ঘটনায় শিশুরা আক্রান্ত হয়।
মানবাধীকার কর্মীদের মতে, জাতিসংঘের প্রকাশ করা সংখ্যা মূল ঘটনার একটি অংশমাত্র। পুলিশি নথি অনুসারে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর কক্সবাজার সংলগ্ন বিভিন্ন শিবিরের অন্তত ৫২৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পাচারের শিকার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গত রোববার পুলিশ জানিয়ছে যে, সম্প্রতি দুজন সন্দেহভাজন পাচারকারীর কাছ থেকে ১৩ জন রোহিঙ্গা মেয়ে শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের মতে, কক্সবাজার থেকে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে ঢাকায় আনা হয়েছিলো, যদিও তাদেরকে বিদেশে পাচার করে দেওয়াই পাচারকারিদের মূল লক্ষ্য ছিলো।
এর আগে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও জাতিসংঘকে শরণার্থী রোহিঙ্গা শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকতে বলেছিলো। কারণ এই উদ্যোগের ফলে তাদের বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার ধারণা হতে পারে। বাংলাদেশের এমন মনোভাব রোহিঙ্গাদের এক প্রজন্মকে শিক্ষাহীন করে দেওয়ার ভীতি তৈরি করেছিলো।
চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের তাদের অবস্থান থেকে আসা অধিকারকর্মীদেরকাছে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের শিশু তহবিল উইনিসেফের মুখপাত্র ইয়েনি গ্যামিং এ বিষয়ে বলেন, “এই উদ্যোগ রোহিঙ্গা শিশুদের জীবনবোধ ও ভবিষ্যত সম্পর্কে ধারণা তৈরি করবে, তাদের হতাশা ও অস্থিরতা দূর করবে এবং এইভাবে তারা নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেও রক্ষা পাবে।”
তিনি আরো বলেন, “শিক্ষার প্রত্যাশা ও সুযোগ না থাকা শরণার্থীদের ঝুঁকি নেওয়ার মনোভাব তৈরি করতে পারে। যেহেতু তাদের পরিবার জীবনযুদ্ধে কাতর, সেহেতু শিক্ষাহীনতা শিশুদের কাজে বাধ্য করতে পারে, বাল্যবিয়ে বা এ রকম কোনো শোষণ বা হেনস্থায় আক্রান্ত করতে পারে।”
এখনো অবশ্য শরণার্থী শিবিরে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। রোহিঙ্গা অভিভাবকদের মতে, বিদ্যমান ব্যবস্থা খুবই অপরিকল্পিত ও অগোছালো।
রোহিঙ্গা নারী শিক্ষা কার্যক্রম, যা শরণার্থী শিবিরে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে, এর প্রতিষ্ঠাতা শরণার্থী নারী শামিমা বিবি এ বিষয়ে বলেন, “আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হলে সব কিছুই গোছালো হবে এবং রোহিঙ্গা বাবা-মায়েরা তাদের শিশুদের বিষয়ে আরো যত্নবান হবে।”
তিনি আরো বলেন, “শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে রোহিঙ্গা শিশুরা আশাবাদী হবে এবং এটি পাচার কমাতে সহায়তা করবে।”
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.