লিখেছেন নাঈমুল করিম
ঢাকা, এপ্রিল ৫ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) - করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পশ্চিমা অনেক প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ বাতিল করে দেওয়ায় বাংলাদেশের অনেক গার্মেন্ট কারখানা লোকশানের আশঙ্কায় বন্ধ রাখা হয়েছে এবং বহু কর্মীকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোববার বিপুল সংখ্যক কর্মী তাদের কারখানায় গিয়ে বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন।
আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য এখনো পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশের শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন বেশির ভাগ শ্রমিককে আপাতত বাসায় থাকতে বলা হয়েছে বা ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খুব কম সংখ্যক কর্মী।
চীনের পরই বাংলাদেশই পশ্চিমা দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে। এই খাত থেকেই বাংলাদেশের ৮০ শতাংশের বেশি বৈদিশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। দেশটির তৈরি পোশাক শিল্পে অন্তত চার হাজার কারখানা আছে যাতে ৪০ লাখের বেশি লোক কাজ করেন এবং এদের বেশির ভাগই নারী কর্মী।
প্রচুর শীর্ষসারির পশ্চিমা ফ্যাশন ব্রান্ড বাংলাদেশে তাদের পণ্য তৈরি করে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এবং অনেক দেশ লকডাউনে থাকায় ক্রয়াদেশ বাতিল করার ঘটনা বেড়ে চলছে।
রোববার বাংলাদেশের অনেক পোশাক কারখানার শ্রমিক মার্চ মাসের বেতন তোলার জন্য তাদের কারখানায় যান। এর আগে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি সিদ্ধান্তে ১০ দিন সব কিছু বন্ধ ছিলো।
পরে সরকার কর্তৃক সব কিছু বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু কারখানা মালিকরা কর্মীদের ৫ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেয়।
এ বিষয়ে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি খাদিজা আক্তার বলেন, “রোববার শ্রমিকরা কারখানায় গিয়ে দেখেন বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ। এ সময় তাদেরকে বলে দেওয়া হয়েছে চলমান স্থিতিবস্থা শেষ হলে কারখানা খোলা হবে।”
ঝুঁকিতে পড়ে গেছেন বহু শ্রমিক
সমন্বয়হীনতার কারণে বহু শ্রমিক দ্রুত কাজে ফেরার চেষ্টা করতে গিয়ে তাদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন খাতিজা আক্তার। এর ফলে করোনাভাইরাস ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ববিধি তারা মানতে পারেননি এবং অন্য দিকে পুলিশ তাদেরকে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, “এই শ্রমিকদের কাজে ফেরার কোনো দরকারই ছিলো না। কিন্তু তাদেরকে কারখানা বন্ধ থাকার বিষয়টি ফোনে বলা উচিত ছিলো।”
গার্মেন্টস কর্মীদের সংগঠনগুলো সরকার, ক্রেতা এবং কারখানা মালিকদের কাছে বেতন নিয়মিত রাখার অনুরোধ করেছে যাতে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া কর্মীরা তাদের পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে পারে।
বাবুল রহমান নামে একজন গার্মেন্টকর্মী জানান, চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি তার গ্রামের বাড়ি থেকে ১৫০কিলোমিটার পথ অটো রিকশা বা পায়ে হেঁটে পারি দিয়েছেন, কারণ গণপরিবহন বন্ধ ছিলো। কিন্তু ঢাকায় ফিরে দেখেন তার কারখানা বন্ধ।
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে তিনি বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষ ৫ এপ্রিল আমাকে কাজে যোগ দিতে বলেছিলো। কিন্তু আমি এসে দেখি কারখানা বন্ধ।” প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয়ে বাবুল তার আসল নাম প্রকাশ করতে চাননি।
তিনি আরো বলেন, “স্থিতিবস্থার কারণে বাস বন্ধ ছিলো। ফলে তিনগুণ টাকা বেশি খরচ করে আমি ঢাকা এসেছিলাম।”
বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুসারে যদি কোনো কারখানা বন্ধ থাকে তাহলে পুনরায় চালু হওয়া পর্যন্ত কর্মীদের তাদের মূল বেতনের কম টাকা পরিশোধ করা হবে। বাবুল বলছেন, এই পরিস্থিতি তার পরিবারকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ফলে সব কিছুরই দাম বেশি। এই অবস্থায় যদি বেতন কমে যায়, তাহলে কিভাবে বেঁচে থাকবো জানি না।”
বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এপ্রিলের ১২ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শিব নাথ রায় এ বিষয়ে বলেন, “আমরা জানি যে এখানে কিছু জটিলতা আছে। তবে আমরা আশাবাদী কারখানা মালিকগণ আমাদের অনুরোধ রাখবেন।”
গত সপ্তাহে দুটি শীর্ষ শিল্প সংস্থা সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে যে অনেক ফ্যাশন ব্রান্ডের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে চলতি অর্থ বছরে বাংলাদেশ প্রায় ৬ মিলিয়ন রপ্তানি আয় হারাবে।
কয়েকটি শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মানবাধিকার সংস্থা পশ্চিমা বড় ফ্যাশন ব্রান্ডগুলোকে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের কর্মীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আবেদন করেছে।
ব্রান্ডগুলো শ্রমিকদের জন্য কোনো প্রণোদনা ঘোষণা করবে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লোবাল ইউনিয়নের অপূর্ব কাইওয়ার বলেন, “আমরা আমাদের সহযোগীদের সাথে আলোচনা করছি যাতে এ রকম কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়।”
তিনি আরো বলেন, “ব্রান্ডগুলো তাদের নিজেদের মধ্যকার আলোচনা সেরে নিচ্ছে। আশা করি শিগগিরই আমরা কোনো ইতিবাচক খবর পাবো।”
(প্রতিবেদনটি লিখেছেন নাঈমুল করিম @Naimonthefield; অনুবাদ করেছেন বেলিন্ডা গোল্ডস্মিথ। অনুগ্রহ করে থম্পসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে ক্রেডিট দিন, যা থম্পসন রয়টার্সের দাতব্য শাখা এবং যা মানবিক, নারী ও এলজিবিটি+ অধিকার, মানবপাচার, সম্পত্তির অধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে। ভিজিট করুন: http://news.trust.org)
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.