লিখেছেন নাঈমুল করিম
ঢাকা, এপ্রিল ১৭ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) - করোনাভাইরাসের প্রভাবের পরও যে সব পশ্চিমা ব্রান্ড বাংলাদেশে দেওয়া ক্রয়াদেশ বাতিল করেনি, তারা এখন ৫০ শতাংশ মূল্য ছাড়ের দাবি করছে, শুক্রবার এমন জানিয়েছেন বাংলাদেশের কারখানা মালিকগণ। এই অবস্থা এরই মধ্যে অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে হিমশিম খাওয়া বাংলাদেশের জন্য আরো কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের কয়েক মিলিয়ন পরিবার গার্মেন্ট খাতের উপর নির্ভরশীল। করোনাভাইরাস মহামারীল কারণে এই খাত ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে। কারখানা মালিকদের দেওয়া তথ্য মতে, এরই মাধ্যে তিন বিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেছে বা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। যার ফলে এপ্রিল মাসের অর্ধেকের মধ্যেই রপ্তানি আয় ৮৪ শতাংশ পড়ে গেছে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি রুবানা হক এ বিষয়ে বলেন, “আমরা মূল চুক্তিতে তাদের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কী বলা আছে তা দেখছি… সেখানে বলা আছে মোট মূল্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দরদাম করা যাবে।”
পশ্চিমা দেশগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানি করার ক্ষেত্রে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে এই খাত থেকে এবং এই খাতে ৪০ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করেন, যাদের বেশির ভাগই নারী।
রুবানা হক বলেন যে পশ্চিমা ব্রান্ডগুলোর মধ্যে অনেকেই এখনো বলেনি কবে তারা মূল্য পরিশোধ করবে বা কবে পণ্য গ্রহণ করবে। পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই আচরণকে তিনি ‘সময় নষ্ট করার কৌশল’ বলে আখ্যায়িত করেন।
সুইডিশ ফ্যাশন এইচএন্ডএমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারা ছাড়া আর কোনো ব্রান্ডই আমাদের স্পষ্ট করে বলেনি কবে তারা মূল্য পরিশোধ করবে বা পণ্য গ্রহণ করবে।”
তিনি আরো বলেন, “অন্যদের মূল্য পরিশোধ করা পণ্য গ্রহণ করা শর্তসাপেক্ষ ব্যাপার। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান মূল্য পরিশোধের ও পণ্য গ্রহণের তারিখ পিছিয়ে দিয়েছে।”
শ্রমিক অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তার বলেন মূল্য ছাড়ের এই দাবির কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তার নেতিবাচক প্রভাব ভোগ করতে হবে শ্রমিকদের।
তিনি বলেন, “এর প্রভাবটা দেখা যাবে এক মাসের মধ্যে, যখন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কর্মীদের বেতন ও ঈদ বোনাস দিতে হবে।”
বর্তমান সঙ্কটে পশ্চিমা অর্থনীতিও ভেঙে পড়েছে। বেশির ভাগ দেশেই ফ্যাশন ব্রান্ডগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এর ফলে বেশির ভাগ ব্রান্ড তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল করে দিয়েছে। খুব কম সংখ্যক ব্রান্ড তৈরি হয়ে যাওয়া পণ্য ও তৈরি হতে থাকা পণ্য গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এ বিষয়ে একজন সরকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন ক্রয়াদেশ বাতিল করা বা মূল্য কম দেওয়অর দাবি ন্যায় সঙ্গত নয় এবং কর্তৃপক্ষ কূটনৈতিক উপায়ে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ জাফরুদ্দিন এ বিষয়ে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, “কর্মপরিবেশ নিরাপদত ও যথাযথ করার জন্য আমাদের কারখানা মালিকগণ প্রচুর অর্থ খরচ করেছেন। এরপরও ভালো মূল্য না পাওয়াটা ন্যায় সঙ্গত নয়।”
গুরুত্বপূর্ণ এই রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ৫৮৮ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্রকল্প ঘোষণা করেছে।
তবে শ্রমিক নেতারা বলছেন এই বরাদ্দ যথেষ্ট নয় এবং তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্রেতাদের সহায়তা করার জন্য ক্রেতাদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।
এ দিকে পুলিশ জানিয়েছে, বকেয়া বেতনের দাবিতে চলতি সপ্তাহে কয়েক হাজার শ্রমিক লকডাউনের সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করেছেন।
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.