লিখেছেন নাঈমুল করিম
ঢাকা, জুলাই ১৩ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) — হোটেলে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে দুবাই নিয়ে শত শত নারীকে অর্থের বিনিয়মে যৌনকর্মে বাধ্য করার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
পুলিশ আরো জানিয়েছে, এই ঘটনার শিকার হওয়া নারীদের মাসিক বেতন দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছিলো যে গৃহকর্মী অথবা নর্তকী হিসেবে কাজ করতে হতে পারে। কিন্তু পরে তাদেরকে অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্মে বাধ্য করা হয় এবং যারা এই কথা শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাদেরকে প্রহার করা হয়েছে।
যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজনকে এই চক্রের হোতা বলে মনে করা হচ্ছে। এ বছরের শুরুর দিকে দুবাই থেকে বের করে দেওয়ার পর তিনি ঢাকায় আত্মগোপন করে ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এই মাসের শুরুর দিকে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করার সময় তাকে পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সাথে গ্রেপ্তার হওয়া অন্য দুজনকে ‘দালাল’ বলে অভিহিত করেছে পুলিশ এবং অন্য অনেককে খোঁজা হচ্ছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক ইমতিয়াজ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, “আমরা এই চক্রের নেতাকে গ্রেপ্তার করেছি। তবে এখানে আরো লোক আছে যারা এই ব্যবসা পরিচালনা করছে। যতো দ্রুত সম্ভব আমরা তাদেরকেও গ্রেপ্তার করবো। এখন পর্যন্ত আমরা ২০ শতাংশ কাজ করতে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “যে নারীদের তারা সম্ভাব্য লক্ষ্য বানিয়েছে তাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে অনেকে গার্মেন্টকর্মী, অনেকে কাজের সন্ধান করছেন। এই পাচারকারিরা অন্তত আট বছর ধরে এই কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং তারা আনুমানিক কয়েকশ নারীকে বিদেশে পাচার করেছে।”
গত মে মাসে ২৪ জন নাগরিক খুন হওয়ার পর বাংলাদেশ মানবপাচারের দমনে কঠোরভাবে কাজ করছে। গত মাসে একটি মাত্র অভিযানেই অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন পাচারের মতো অপরাধ দমন করার জন্য বাংলাদেশকে পাচারের আইনি কার্যক্রম সম্পাদন করার হার বাড়াতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিকিং ইন পারসনের প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে ৪,০০০ -এর বেশি পাচারের মামলা তদন্ত বা বিচারিক প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষমান ছিলো। ২০১৯ সালে পাচারের সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির হার ছিলো মাত্র ১.৭ শতাংশ।
অভিবাসী অধিকার সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের প্রধান শাকিরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, “দুর্বল তদন্ত বা অপ্রতুল তথ্য-প্রমাণের কারণে পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া অনেকেই কোনো শাস্তি পান না।”
তিনি আরো বলেন, “পাচারকারিদের আরো বেশি করে শাস্তির আওতায় এনে নজির স্থাপন করা উচিত।”
সংখ্যালঘুসহ আরো নারীদের পাচারের অভিযোগে গত বছর অন্তত ছয়জন বাংলাদেশির জেল হয়েছে।
আহমেদ বলেন, একাধিক দেশ জড়িত থাকায় এই অপরাধ দমন করা কঠিন।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে স্থানীয় পাচারকারিদের আমরা ভয় দেখাতে পারছি। কিন্তু যারা বিদেশে থেকে পাচারচক্রের সাথে কাজ করে তাদের বিষয়ে আমরা তেমন কিছু করতে পারি না।”
(প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন নাঈমুল করিম @Naimonthefield; সম্পাদনা করেছেন ক্লেয়ার কোজেন্স। অনুগ্রহ করে থম্পসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে ক্রেডিট দিন, যা থম্পসন রয়টার্সের দাতব্য শাখা এবং যা মানবিক, নারী ও এলজিবিটি+ অধিকার, মানবপাচার, সম্পত্তির অধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে। ভিজিট করুন: http://news.trust.org)
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.