বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বাল্যবিবাহ ও পাচারের ঝুঁকি বাড়ছে এবং মহামারির ফলে প্রতিদিনই যুবসেবা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হওয়া জাতিসংঘ পরিচালিত এক সমীক্ষায় এমন দাবি করা হয়েছে।
গত এপ্রিলে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন কার্যক্রম সংকুচিত করে এবং করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি খাদ্য সরবারহে মনোযোগ দেয়। একই সাথে দাতাসংস্থাগুলোর কর্মী ও শরণার্থীদের চলাচল সীমিত করা হয়।
জাতিসংঘের সাথে শরণার্থী শিবিরে শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা একটি উপ-সেবা বিভাগ বলছে যে, এই পদক্ষেপের ফলে অনেক শিশুর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে এবং তাদের পক্ষে সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
গত মে মাসে এই সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন এই ভঙ্গুর পরিস্থিতি এখনো বহাল আছে।
এই বিভাগের সমন্বয়কারী ক্রিস্টেন হায়েস বলেন, “কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী সময়ে বৃহত্তর মানবিক উদ্যোগ এবং… বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ ছিলো। তখন শিশুরা সুবিধাদাতাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতো এবং তাদের আশঙ্কার বিষয়ে বন্ধুদের সাথে আলাপ করতে পারতো। কিন্তু সেই সব সুবিধা এখন নেই।”
তিনি আরো বলেন, “বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে, কারণ যে সব উদ্যোগের মাধ্যমে এটি ঠেকানো যায় তা এখন নেই। চলমান কড়াকড়ির ফলে পাচারের ঝুঁকিও বাড়ছে।”
জাতিসংঘের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে দলে দলে বাংলাদেশে চলে আসা ৭০০,০০০ রোহিঙ্গার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শিশু।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিভাগের মতে, গত বছর রোহিঙ্গাদের মধ্যে চিহ্নিত হওয়া ৩৫০টি পাচারের ঘটনার ১৫ শতাংশতেই শিশুরা জড়িত ছিলো।
চলতি মাসে ৩০০ রোহিঙ্গা ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ধারণা করা হয়, তারা পাচারকারিদের কাছে ছয় মাস সাগরে আটক ছিলো।
সেবাসংস্থার কর্মীরা মে মাসে মনে করেছিলেন জনবহুল আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভাইরাস ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক তথ্যে জানা যাচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে ১৮৯ জন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন সাতজন। অর্থাৎ যতোটা আতঙ্ক ছিলো ভাইরাসের প্রভাব ততোটা হয়নি।
আশ্রয়কেন্দ্রে সেবা সংকুচিত করা বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, “কোভিডের সময়ে (সেবার) সাধারণ কর্মক্ষমতা আশা করা যায় না।”
তিনি বলেন, “গৃহিত পদক্ষেপসমুহূ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করেছে। আমাদের কাজ ভালো ছিলো। এখন আমরা স্বাস্থ্যবিধি মাথায় রেখে ধীরে ধীরে সাধারণ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করছি।”
সমীক্ষাটিতে বলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শিশুশ্রম ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি শিশু সুরক্ষা কর্মীদের বৃহত্তর কার্যক্রমের সুপারিশ করেছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে কাজ করা বাংলাদেশি দাতাসংস্থা ব্র্যাক বলেছে যে তারা তুলনামূলক বেশি বাল্য বিবাহ, শিশুদের শারীরিক নির্যাতন ও গৃহ নির্যাতন লক্ষ্য করেছে।
ব্র্যাকের মুখপাত্র হাসিনা আখতার বলেন, “আপাতত আমরা অনলাইনে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে একজন একজন করে কথা বলে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.