ঢাকা, অক্টোবর ১ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) - করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চাকরি হারানো হাজার হাজার বাংলাদেশি গার্মেন্টকর্মী কাজ পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছেন এবং জরুরি সহায়তা না পেলে চরম দারিদ্রে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন অধিকারকর্মীরা।
গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশি গার্মেন্ট শিল্প অন্তত ৩.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি আদেশ হারায় বা ক্রয়াদেশ বাতিল হয় এবং রপ্তানির পরিমাণ ৮৪ শতাংশ অবনমন হয়, জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমানোর উদ্দেশ্যে এক মাসের বেশি সময় বন্ধ রাখার পর গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের ৪,০০০ এরও বেশি গার্মেন্ট কারখানা খুলে দিয়েছে, যেখানে ৪ মিলিয়নের বেশি লোক কাজ করেন এবং যাদের বেশির ভাগই নারী। বাংলাদেশে অন্তত ৩৬৪,৯০০ লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সর্বশেষ তথ্য অনুসারে ৫,২৫০ জন মারা গেছেন।
এক দিকে গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন বাতিল হওয়া ক্রয়াদেশের প্রায় ৯০% শতাংশ পুনর্বহাল হওয়ায় এই শিল্পে প্রাণ ফিরে এসেছে। অন্য দিকে অধিকারকর্মীদের দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের সংখ্যা বিদ্যমান সুযোগের চেয়ে অনেক বেশি এবং চাকরি হারানো কর্মীদের সামনে বিকল্প সহায়তা পাওয়ার উপায়ও অপ্রতুল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শ্রমিক ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা কল্পনা আক্তার ফোনে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, “চাকরি হারানো প্রতি দশজন কর্মীর মধ্যে মাত্র একজন চাকরি পাচ্ছেন।”
তিনি আরো বলেন, “এই পরিস্থিতি হাজার হাজার কর্মী ও তাদের পরিবারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে, কারণ তারা গত তিন থেকে চার মাসের মধ্যে কোনো রোজগার করতে পারেননি।”
উদ্ভুত অবস্থায় তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কোনো সামাজিক উদ্যোগও নেই, ফলে অনেক কর্মী চাকরি না পেয়ে তাদের গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছেন এবং স্থানীয় দাতা সংস্থার সহায়তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
সাজিদা ফাউন্ডেশনের সাথে অংশীদারিত্ব করা ব্রিটিশ ফ্যাশন অ্যাপ মলজি বাতিল বলে গণ্য হওয়া পোশাক বিক্রি করে ১০,৫০০ শ্রমিককে ২৫০,০০০ ডলার মূল্যের সাহায্য প্রদান করেছে।
শ্রমিক অধিকারকর্মীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে তারা বলছেন যে কেবলমাত্র দাতা সংস্থাদের সহায়তা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য যথেষ্ট নয়। একই সাথে তারা গার্মেন্ট শিল্পকে সহায়তা করার লক্ষ্যে সরকারকে কল্যাণ সুবিধা প্রবর্তনের জন্য কারখানার মালিক এবং ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত নন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের এমন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি অর্থ সাহায্য উদ্যোগের অধীনে কাজ হারানো গার্মেন্টকর্মীদের নগদ অর্থ সাহায্য প্রদানের আলোচনা চলছে।
আছে ধীরগতির আশঙ্কা
গত এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে চাকরি হারানো ২০ জন গার্মেন্টকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন। চাকরি হারানো কেউ কেউ আবার কাজে নিয়োগ পাচ্ছেন কিন্তু বেশির ভাগই কাজ খুঁজে পেতে রীতিমত সংগ্রাম করছেন।
এপ্রিল মাসে চাকরি হারানো ২৬ বছর বয়সী জেসমিন বলেন, “আমি গত দুই মাস ধরে বাড়ি ভাড়া দিতে পারছি না। বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতেও কষ্ট হচ্ছে।” তিনি পুরো নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, “প্রতি মাসের শুরুতে আমি কারখানার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, তখনই নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এটা খুব কঠিন কারণ আমার মতো বহু লোক চাকরি খুঁজছে। আশা করি অক্টোবর মাসে ভালো কিছু হবে।”
আগস্ট মাসে রপ্তানির মূল্য দাঁড়িয়েছে ২.৯ বিলিয়ন ডলার, এর মাধ্যমে গার্মেন্ট শিল্প কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এপ্রিল মাসে এর পরিমাণ ছিলো ৫২০ মিলিয়ন ডলার। কারখানা মালিকরা বলছেন, প্রত্যাশিত ক্রয়াদেশ দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে এবং ব্র্যান্ডগুলো ১০-১৫ শতাংশ মূল্য ছাড় দাবি করছে।
প্রায় ৮০০ কারখানার প্রতিনিধি বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “এখন যে ক্রয়াদেশ আসছে তা খুব বেশি নয়।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা আশা করেছিলেন ক্রিসমাসের আগে অনেক ক্রয়াদেশ পাওয়া যাবে কিন্তু আসলে তা হয়নি।”
প্রায় এক লাখ গার্মেন্টকর্মীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের প্রধান নাজমা আক্তার বলেন, চাকরি হারানো অনেক কর্মী আগের প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছেন, তবে কঠিন শর্তের ভিত্তিতে।
তিনি বলেন, “কর্মীদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়ে উঠেছে, কারণ নতুন ক্রয়াদেশ আসছে না।”
তিনি আরো বলেন, “যে সব শ্রমিকরা এতোদিন কাজ হারাননি, তারা এখন হারানোর ভয়ে আছেন কারণ ইউরোপে করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।”
এপ্রিল মাসে চাকরি হারানো ২৬ বছর বয়সী সহকারীকর্মী কলি বলেন, তিনি এখন সম্পূর্ণভাবে তার পরিবারের উপর নির্ভরশীল।
তিনি বলেন, “আমি তেমন দক্ষ কর্মী নই, আবার সহকারী কর্মীদের তেমন চাহিদা নেই।” তিনিও পুরো নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, “আমি খুব চেষ্টা করছি কিন্তু কোনো কাজ পাচ্ছি না। আমি জানি না আমার ভবিষ্যতে কী হবে।”
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.