ঢাকা, নভেম্বর ২৪ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) — মানবপাচারচারিদের বিচারের আওতায় আনার কাজে গতি বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ, প্রচুর ঝুলে থাকা মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য স্থাপন করা বিশেষ আদালতের প্রথম রায়ের পর মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা বেশ কিছুসহ মানবপাচারের হাজার হাজার মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য এবং রায় প্রদানের নিম্ন হার উন্নত করার জন্য গত মার্চ মাসে বাংলাদেশে আটটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়।
ঢাকায় প্রদান করা ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে সাথি আক্তার নামে ২৭ বছর বয়সী একজন নারী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং তাকে ১০ বছরের জেল ও ২০,০০০ টাকা (২৩০ ডলার) জরিমানা করা হয়েছে। তিনি তার প্রতিবেশির সন্তানকে অপহরণ করে পাচারকারি চক্রের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক টেলিফোনে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, “পাচারবিরোধী ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আমরা এই বার্তা দিতে চেয়েছি যে এই বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি। … আমরা মামলাগুলো নিষ্পত্তির কার্যক্রম আরো গতিময় করেছি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করে বিশ্বের কাছে একটি উদাহারণ স্থাপন করতে চাই। প্রথম মামলার বিচারকার্য ও রায় প্রদান প্রমাণ করেছে যে আমরা এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে চাই।”
সরকারি তথ্য মতে, ২০১২ সালের একটি আইন অনুসারে, যা পাচারকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, অন্তত ৪,০০০ মামলা তদন্ত ও বিচারকার্যের জন্য অপেক্ষমান আছে। মানবপাচার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক বিস্তারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আইনে বিচারকার্য নিষ্পত্তির হার ১.৭%।
অধিকার কর্মীদের মতে, চলতি বছরের আগে পাচার-বিরোধী ট্রাইব্যুনাল না থাকা, এবং আন্ত:দেশীয় পর্যায়ে প্রমাণ সংগ্রহে পুলিশের জন্য নির্দেশনার অভাবের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকায় স্থাপিত ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রোসিকিউটর বলেন যে, এই মামলাটি মাত্র ছয় দিনের শুনানিতে নিষ্পত্তি হয়েছে— যা তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত দ্রুতগিততে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি পাচারের শিকার হওয়া শিশুর মা গোলাপি আক্তারকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
সাজ্জাদুল হক বলেন আদালতের বাইরে সমঝোতায় না গিয়ে বিচার পাওয়ার জন্য গোলাপি আক্তারের দৃঢ়তা এবং কয়েকজনের সাক্ষ্য এই মামলার রায়ের মূল বিষয় ছিলো।
সাজ্জাদুল হক বলেন, “এ রকম অনেক পাচারের মামলা আছে, যা জেতা খুব কঠিন। কিন্তু এই মামলার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ বিষয়ই আমাদের পক্ষে ছিলো।”
অসংখ্য অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসতে থাকা অব্যাহত চাপের পরও বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে পাচারবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করেছে।
লিবিয়ায় ২৪ জন বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী অপহরণ ও খুনের ঘটনার এক মাস পর, গত জুলাই মাসে ঢাকায় পাচার চক্রের ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে পাচারবিরোধী সবচেয়ে বড় অভিযান বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মানবসম্পদ রপ্তানি করা দেশ, এবং বাংলাদেশ প্রতি বছর বিদেশ যাওয়া ৭০০,০০০ কর্মীর পাঠানো টাকার উপর নির্ভরশীল। অধিকারকর্মীরা মনে করেন, অনানুষ্ঠানিক নিয়োগদাতারা বিদেশি নিয়োগের জন্য প্রচুর টাকা নেন, যা হেনস্থা ও মানবপাচাররের আশঙ্কা তৈরি করে।
পাচারবিরোধী কর্মীরা ট্রাইব্যুনালের দ্রুত বিচারকার্য ও এর রায়ের প্রশংসা করেছেন। তারা আরো বলেছেন যে, ঝুলে থাকা মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য আরো অনেক কাজ এখনো বাকি পড়ে আছে।
পাচারবিরোধী দাতা সংস্থা জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের কান্ট্রি ডিরেক্টর মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, “কার্যকর বিচারের জন্য পুলিশ ও আইনজীবীদের মধ্যকার সমন্বয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.