লিখেছেন নাঈমুল করিম
ঢাকা, জানুয়ারি ২০ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) - সারা বিশ্বে তৈরি হওয়া বেশির ভাগ পোশাক প্রস্তুত করা ছয়টি দেশের উৎপাদনকারিরা পশ্চিমা ব্র্যান্ডের সাথে আরো ভালোভাবে দর কষাকষি করার জন্য একটি ঐকফ্রন্ট গঠন করেছে। মহামারির শুরুতে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো ক্রয়াদেশ বাতিল করায় এশিয়ান দেশের কর্মীরা দারুণ বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন।
স্টার নেটওয়ার্ক অব এশিয়ান সাপ্লাইয়ার্সের একজন মুখপাত্র মিরান আলি বুধবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমরা সাধারণত যে সব সমস্যার মুখে পড়ি তা সমাধান করতেই আমরা এক হতে চাই। এর উদ্দেশ্য কোনো ক্রয়াদেশের জন্য সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা নয়। বরং এটি হলো নৈতিক ব্যবসা পদ্ধতির অনুশীলন নিশ্চিত করা।”
আলি বলেন, সোমবার শুরু করা এই উদ্যোগটি মূল্য পরিশোধ ও সরবারহ শর্তে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কথা বলার সময় এশিয়ান উৎপাদনকারিদের জন্য একটি “শক্ত ভূমিকা” পালন করবে।
এই উদ্যোগটি ছয় দেশের নয় সংগঠনকে প্রতিনিধিত্ব করবে। এর মধ্যে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গার্মেন্ট উৎপাদনকারি দেশ চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মায়ানমার এবং কম্বোডিয়া।
আলি বলেন, এই দেশগুলো সম্মিলিতভাবে সারা বিশ্বের রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের ৬০ শতাংশের যোগান দেয় এবং কয়েক মিলিয়ন লোকের চাকরি দেয়।
তিনি আরো বলেন, অন্যান্য দেশের সরবারহকারিরাও চাইলে এই উদ্যোগে যোগ দিতে পারেন।
কম্বোডিয়া-ভিত্তিক গার্মেন্ট সংগঠনের একজন মুখপাত্র কেন লু বলেন, “আমরা মানসম্মত পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য একত্র হচ্ছি। কেউ-ই আমাদের তৈরি করা শর্ত মানার জন্য বাধ্য নয়। তবে আমরা আশা করি প্রত্যেক ক্রেতা ও সরবারহকারির জন্য এগুলো নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে।”
গত বছরের শুরুর দিকে ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানগুলো করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল করে দেয়। নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক ক্লিন ক্লোদস ক্যাম্পেইনের মতে, এই পরিস্থিতির বলে অন্তত ৫.৮ বিলিয়ন মূল্যের মজুরির ক্ষতি হয়।
গবেষকদের মতে, ২০২০ সালের দ্বিতীয় অর্থে এসে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো মূল্য ছাড়ে ক্রয়াদেশ দেওয়ার দাবি তুলে এবং মূল্য পরিশোধ করতে অতিরিক্ত সময় নেয়, অথচ অনেক সরবাহকারি প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছিলো।
আলি বলেন, একটি ঐক্যফ্রন্ট থাকলে এই ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা চাপ তৈরি করতে পারবে এবং তারা উপদেষ্টা বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার জন্য বসতে পারবে।
তিনি বলেন, “অঞ্চলভিত্তিক অনৈতিক আচরণের জন্য ক্রেতাদের চাপ তৈরি করার জন্য কোনো সংস্থা নেই। যেমন কেউ দক্ষিণ এশিয়ার কোনো প্রতিষ্ঠানে ক্রয়াদেশ দিলো এবং প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব গ্রহণ করলো, এরপর ওই ক্রেতা ক্রয়াদেশ বাতিল করে অন্য অঞ্চলে চলে গেলো। এটি অনৈতিক অনুশীলন।”
প্রায় ৬০ মিলিয়ন লোক এশিয়ার তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ করেন। শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিক্রি কমে যাওয়া মানে কর্মীদের শোষনের ঝুঁকিতে পড়া। এটি চাকরি ছেড়ে দিয়েও হতে পারে বা এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েও হতে পারে যারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঠকাতে অবাস্তব চুক্তি করে।
অধিকারকর্মীরা উৎপাদনকারিদের আহবান জানিয়ে বলেছে, তারা যাতে শুধু নিজেদের লাভের কথাই চিন্তা না করেন; বরং কর্মীদের অবস্থা উন্নয়নের জন্যও কাজ করেন।
ব্রিটেন-ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা লেবার বিহাইন্ড দ্য লেবেলের প্রধান মেগ লুইস এ বিষয়ে বলেন, “আমরা আশা করছি যে এই পদক্ষেপটি কর্মীদের বেতন বাড়ানোর জন্য এবং তাদের উন্নত কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে স্পষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করবে।”
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.
