ঢাকা, এপ্রিল ১৬ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) — চলতি সপ্তাহে ঢাকায় লকডাউনে খোলা থাকা গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করতে যাওয়ার জন্য মিম আক্তারকে একটি রিকশা পেতে অন্তত এক ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজধানীতে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে, ফলে কর্মীদের অফিসে নেওয়ার জন্য গার্মেন্ট কারখানার পরিবহনের ব্যবস্থা করার কথা। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানই তা করছে না। যার কারণে কর্মীদের লম্বা পথ পায়ে হাঁটতে হচ্ছে অথবা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি টাকা খরচ করে অফিসে যেতে হচ্ছে।
দুই সন্তানের মা ৩১ বয়সী আক্তার মাসে ৯,০০০ টাকা (১০৬ মার্কিন ডলার) বেতন পান যা দিয়ে তার সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তিনি বলেন, “সাধারণ সময়ে আমাকে ১০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু এখন খরচ হচ্ছে ৩০ টাকা।”
তিনি আরো বলেন, “আমি রিকশায় উঠার পর পুলিশ তা থামিয়ে দিয়েছে এবং আমাকে পুলিশের কাছে ব্যাখ্যা করতে হয়েছে যে অফিসে যাওয়ার জন্য আমার আর কোনো উপায় ছিলো না।”
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গত বুধবার থেকে বাংলাদেশে লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এই সময়েও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক খাত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই খাতে অন্তত চার মিলিয়ন লোক কাজ করেন।
কারখানাগুলোর প্রতি পাঁচ কর্মীর মধ্যে একজনের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কথা যারা হেঁটে অফিসে যেতে পারেন না। এর পাশাপাশি মাস্ক ও হাত ধোয়ার জন্য সাবান সরবারহ করা ও দূরত্ববিধি মানা নিশ্চিত করাসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগ করার কথা।
কিন্তু অন্তত দশটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী এই সপ্তাহে থমসন রয়টার্সের সাথে কথা বলেছেন এবং জানিয়েছেন যে তাদের প্রতিষ্ঠান পরিবহনের ব্যবস্থা করছে না।
শ্রমিক সংঘ বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা কল্পনা আক্তার এ বিষয়ে বলেন, “বাসের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি এবং স্বাস্থ্যবিধির প্রতিপালনের কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়নও আমরা দেখছি না। লকডাউনের আগে যা ছিলো এখনো তাই আছে।”
শ্রমমন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রধান ফারুক হাসান বলেন, “বেশির ভাগ কর্মী কারখানার কাছাকাছি থাকেন। অনেকে বেশ দূরে থাকেন এবং আমরা তাদেরকে (কারখানায়) আনার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।
তিনি আরো বলেন, “আমি কারখানাগুলোকে কিছুটা সমঝোতা করার এবং কারখানা পুরোপুরি না চালাতে বলেছি।”
লকডাউনের সময় কারখানা খোলা রাখায় বেশির ভাগ কর্মী খুশি। বাংলাদেশের আগের লকডাউনে অনেক কারখানা বন্ধ থাকায় কর্মীদের আয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো।
গত বছর গার্মেন্ট খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। কারণ মহামারির কারণে ফ্যাশন ব্রান্ডগুলো তাদের ব্যাবসা বন্ধ করে দেয় এবং এর ফলে মিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়।
যদিও এই খাত কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে, কিন্তু ইউরোপে লকডাউন চলায় ভবিষ্যত এখনো অনিশ্চিত।
৩০ বছর বয়সী নাজমা বেগম বলেন, “অবশ্যই আমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে থাকি, কিন্তু আমরা চাই না গত বছর যা হয়েছিলো তার পুনরাবৃত্তি ঘটুক।” তিনি আরো বলেন, “গত বছর ঈদে আমি আমার সন্তানের জন্য কিছুই কিনতে পারিনি কারণ আমার বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।”
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.
