লিখেছেন নাঈমুল করিম
ঢাকা, এপ্রিল ২২ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) — রানা প্লাজা বিপর্যয়ের অষ্টম বার্ষিকীর আগে শ্রমিক অধিকারকর্মিরা বৃহস্পতিবার ব্রান্ডগুলোর কাছে বাংলাদেশের কারখানা সুরক্ষা চুক্তি বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছেন। রানা প্লাজা বিপর্যয়ে ১,১০০ কর্মির মৃত্যু হয়েছিলো।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার নিকটে আটতলা বিশিষ্ট ভবনটি ধসে পড়ে যা এই খাতের সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় ছিলো। এই ঘটনা এইচএন্ডএম এবং জারাসহ অন্তত ২০০টি ব্রান্ডকে বাংলাদেশে অগ্নি এবং ভবন নিরাপত্তা চুক্তি শীর্ষক একটি সমন্বিত চুক্তি স্বাক্ষরে উদ্বুদ্ধ করে। চুক্তিটির মেয়াদ মে মাসের ৩১ তারিখে শেষ হবে।
শ্রমিক নেতারা বাংলাদেশে এই চুক্তির নবায়ন ও যে সব দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের পরিবেশ আছে, সেখানে এই চুক্তির সম্প্রসারণ প্রত্যাশা করছেন। বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
প্রভাবক সংস্থা ক্লিন ক্লোথ ক্যাম্পেইনের সমন্বয়কারি ইনিকে জেলডেনরাস্ট এ বিষয়ে বলেন, “এই বিপর্যয়ের ফলে যে অর্জনটি পাওয়া গেছে তা যাতে হারিয়ে না যায়, বাংলাদেশ থেকে পণ্য সংগ্রহ করা ব্রান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের তা নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “চুক্তিটি আগামী পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এর আগে মাত্র তিন সপ্তাহে চুক্তিটা সম্পন্ন হয়েছিলো। যদি ব্রান্ডগুলো চায় এখনো এটি হতে পারে।”
আইনগতভাবে বাধ্য চুক্তির ফলে হাজার হাজার পরিদর্শন হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যাতে সেখান থেকে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারি ক্রেতারা পণ্য নিতে না পারেন। শ্রমিক নেতাদের মতে, এই চুক্তির ফলে ১,৬০০ কারখানার পরিবেশ উন্নত করা হয়, যেখানে অন্তত দুই মিলিয়ন লোক কাজ করেন।
কিন্তু বাংলাদেশি উৎপাদনকারিরা এখন রেডি-মেইড গার্মেন্টস সাসটেইন্যাবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি)-এর পক্ষে, চুক্তির কাজগুলো এখন এই সংস্থার আওতায় সম্পন্ন হচ্ছে। শ্রমিক ইউনিয়ন, ব্রান্ড ও কারখানা মালিকরা এর আওতায় আছেন।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট মিরান আলি বলেন, “বিদেশ থেকে এসে বাংলাদেশিদের কী করতে হবে তা বলে দেওয়া ব্যক্তিদের শাসন থেকে বেরিয়ে আমরা আরো সহযোগতিমূলক ও জাতীয় পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় চলে এসেছি।”
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি সমন্বিত চুক্তির মাধ্যমে যা হয়েছিলো, আরএসসি তা আরো উন্নত করতে পারে। ২০১৩ সালের চুক্তি ছিলো ভিন্ন প্রেক্ষাপটনির্ভর, সময়ের সাথে সাথে সেটির ব্যবস্থাপনা ও রীতিনীতি বদলে গেছে। একইভাবে আরএসসি-ও পরিবর্তিত হবে এবং আরো সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাদের নীতিও বদলাবে।”
শ্রমিক ঐক্য সংস্থার প্রধান কল্পনা আক্তার বলেন যে, আইনগতভাবে বাধ্য আন্তর্জাতিক চুক্তি ছাড়া আরএসসি কোনো ব্রান্ড ও সরবারহকারিদের চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ক্রেতা এইচএন্ডএম এক ই-মেইল বিবৃতিতে বলেছে যে তারা আরএসসিকে সমর্থন করবে।
প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র মাসারাট কাদের বলেন, “আমরা দেখেছি চুক্তির দায়িত্ব আরএসসিকে দেওয়ার পর তারা অবিচ্ছিন্নভাবে অগ্রগতি নিশ্চিত করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “এই সংস্থা যাতে পোশাক খাতের টেকসই পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরো স্বাধীনভাবে নিজস্ব সংস্থান ও অর্থের যোগানের মাধ্যমে কাজ করতে পারে, আমরা এখন সেই দিকে মনোযোগী।
গত বছর মহামারির কারণে ব্রান্ডগুলো ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ায় এবং মিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। এই খাতে চার মিলিয়ন শ্রমিক কাজ করেন। অবশ্য এই খাত কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে কিন্তু ভবিষ্যত এখনো অনিশ্চিত।
দাতাসংস্থা অ্যাকশনএইড বৃহস্পতিবার বলেছে, রানা প্লাজা বিপর্যয় থেকে বেঁচে যাওয়া ২০০ জনের মধ্যে ৬০ শতাংশই এখনো বেকার এবং তাদের মধ্যে অনেকে এখনো শারীরিক ও মানসিক অসুস্থায় ভুগছেন এবং তারা এক নাগাড়ে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারেন না।
অ্যাকশনএইড বলে, “রানা প্লাজার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা এমনিতেই অনিশ্চিত জীবন যাপন করেন… মহামারি তাদের ভোগান্তি দ্বিগুণ করে দিয়েছে। তাদের সহায়তা প্রয়োজন।”
Our Standards: The Thomson Reuters Trust Principles.